ক্যারিয়ার! প্ল্যান বি, প্ল্যান সি। দ্বিতীয় অংশ
জোনায়েদ হোসেন, সহকারী কর কমিশনার | প্রকাশিত: ২৪ অক্টোবর ২০২০ ০২:৪৩; আপডেট: ২৪ অক্টোবর ২০২০ ০৩:১৭
লেখাটি পড়ার আগে এই বিষয়ে লেখা আমার আগের লেখাটি অবশ্যই পড়ে নিবেন। নাহলে লেখাটি আপনার খাপছাড়া লাগতে পারে...জোনায়েদ হোসেন
কাঙ্ক্ষিত চাকরি না পেলে বা চাকরি ই না পেলে আপনি কী করবেন? আপনি একটা পরিবারের অংশ, হয়তো অনেক দায়িত্বও আছে আপনার। আবার আপনার ভবিষ্যত অপেক্ষা করছে আপনার ক্যারিয়ারের উপর। সুতরাং হাল ছেড়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। সফলতার একশো একটি রাস্তা আছে, একটি রাস্তা হারিয়ে ফেললেন মানে নিজেকে গুটিয়ে নিবেন এর কোন মানে হয়না। যাইহোক, আগের লেখাটির পরের অংশ পয়েন্ট আকারে লিখছি..
১. আপনার যদি টার্গেট হয় বিদেশে যাবেন তাহলে আপনার পরিবার, আত্মীয় কেউ প্রবাসী থাকলে তাদের সাথে কথা বলুন। প্রথমেই একটা বিষয় নিশ্চিত করবেন, অবৈধ পথে বিদেশ যাবেন না। জীবন একটাই, ভূমধ্যসাগরে বা ইউক্রেনের জঙ্গলে মরার কোন মানে হয়না। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান আছে। সেগুলোতে প্রশিক্ষণ নিয়ে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ইত্যাদি দেশে যেতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যে যেতে চাইলে ভিসা, ওয়ার্ক পারমিট ভালোভাবে চেক করে যাবেন। ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া যাওয়া তুলনামূলক কঠিন। আত্মীয় থাকলে সুবিধা, তাদের মাধ্যমে চেস্টা করতে পারেন।
ইউরোপ বা আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র হিসেবে আবেদন করতে পারেন। মাস্টার্স করার জন্য মাঝারি মানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো টার্গেট করতে পারেন। তবে যা কিছুই করেন অন্ধকারে ঢিল না মেরে জেনে বুঝে করবেন। যে দেশে যাবেন সেদেশের ভাষা, সংস্কৃতি ও আইন কানুন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে যাবেন। বিদেশে টেকনিক্যাল কাজের সুযোগ বেশি। যেখানেই যেতে চান কিছু একটা শিখে যান।
২. কৃষি/খামার: খাদ্য, বস্রের চাহিদা কখনোই শেষ হবে না। কৃষি একটি অপরিহার্য সেক্টর। নতুন, নতুন কৃষির ধারণা দিন দিন বিকশিত হচ্ছে। গরুর খামার এখন একটি জনপ্রিয় সেক্টর। গরু এবং দুধ, দুগ্ধজাত খাবারের দাম অনেক। কেউ চাইলে গরুর খামার করতে পারেন। পাশাপাশি দুগ্ধজাত পন্যের একটা ব্র্যান্ড তৈরি করতে পারেন। সিলেটে আমি এরকম দেখেছি। বাড়ির ভিতরে মিস্টি, দই, পনির, ঘি তৈরি করছে। মান ভালো হওয়ায় মানুষ বাড়ি থেকে কিনে নিচ্ছে। আপনারা এরকম উত্পাদন করলে এলাকার দোকানগুলোতে সাপ্লাই দিতে পারবেন। নিজ এলাকার মানুষদের ফেসবুকে এড করে মার্কেটিং করতে পারেন।
মুরগির খামার, হাঁসের খামার, কোয়েল পাখির খামার, কবুতরের খামার, মাছ চাষ এসব তো আছেই। ছোট্ট কিছু দিয়ে শুরু করে একদিন বড় কিছু হওয়ার স্বপ্ন দেখুন। যে কাজটি ই করবেন একটা জিনিস মাথায় রাখবেন, সঞ্চয় করতে হবে। আপনার আয় যদি ১০০০ হয় ১০০ টাকা আলাদা করে সঞ্চয় করুন। ৫০০০ হলে ৫০০ টাকা এরকম কিছু কিছু সঞ্চয় আপনাকে বড় করে তুলবে। ধনী আর গরীবের প্রধান তফাৎ ধনীরা সঞ্চয় করে গরীবেরা করে না। তাই অল্প হলেও সঞ্চয় করবেন।
৩. অনেকেই শিক্ষকতা করবেন। ভালো শিক্ষকের অনেক সংকট আমাদের। এর দায় শুধু শিক্ষকদের না, সমাজের। যাই হোক, শিক্ষক হতে চাইলে নিজে পড়ুন, ভালো ভাবে বুঝুন। এটা নিয়ে পরামর্শ দেওয়ার তেমন বেশি কিছু নেই।
৪. ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে সামনে। প্রচুর মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কারিগরী কাজের চাহিদা অনেক বেশি থাকবে সেখানে। খোঁজ খবর রাখুন। যেকোন কাজে দক্ষতা অর্জন করুন।
৫. আমার সাথে অনেক প্রবাসীর কথা হয়। বিদেশে তাঁরা সব ধরণের কাজ করেন। কিন্তু বাংলাদেশে ইগোর সমস্যার কারণে সব কাজ করতে পারেননা। এর দায় আমাদের সবার। তবু এর থেকে বের না হওয়ার উপায় নেই। জীবন একটাই, সুতরাং চাকরি হয়নি, এই জীবনের মানে নেই, এটা বলে আসলে কোন লাভ নেই।
শুরুর কথাটা আমার বলে শেষ করছি, প্ল্যান এ বা চাকরির জন্য ইতোমধ্যে অনেক বিনিয়োগ করে ফেলেছেন। হুট করে এটা ছেড়ে দেওয়ার দরকার নেই। কিন্তু যখন আর কোন সুযোগ থাকবে না তখনকার জন্য কিছু হোমওয়ার্ক করে রাখতে পারেন। আপনাদের সর্বাঙ্গীন সাফল্য কামনা করছি।
বিষয়: